ভাগ্য বড় না বুদ্ধি বড়

 

ভাগ্য বড় না বুদ্ধি বড়




একছেলের জন্মের পূর্বে তার বাবা মারা গেলো। ছেলের জন্মের সময় তার ভাগ্য এবং বুদ্ধি দুটো মধ্যে ঝগড়া লেগে গেলো, তারা একজন অন্য জনকে ছোট ভাবতে লাগলো। ভাগ্য বলে আমি বড় বুদ্ধি বললো না আমি বড় এভাবে তারা ঝগড়া করতে করতে। এক সময় বুদ্ধি বললো ভাই ভাগ্য তুমি যখন নিজেকে বড় মনে করছো তাহলে তুমি তাখো আমি চলে গেলাম।

ছেলের মধ্যে ভাগ্য থেকে গেলো আর বুদ্ধি চলে গেলো। এদিকে ছেলের বাবা নেই। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। আস্তে আস্তে ছেলে বড় হচ্ছে। কিন্তুু সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ছেলের বয়স যখন ৮ বছর তখন তার মা যে বাড়িতে কাজ করে সেই বাড়ির মালিক ছেলেটাকে নিয়ে যায় মাঠে ছাগল চড়াতে ।

কিভাবে ছাগল চড়াতে হয় তা তাকে শিখিয়ে  দিয়ে সে বাড়িতে চলে আসে। ছেলে মাটিতে বসে ডান হাতে মাটি নিয়ে ডিল মারে আর তা অন্য জায়গায় পড়ে সোনা হয়ে যায়। বাম হাতে মাটি নিয়ে ডিল মারে তা অন্য জায়গায় পড়ে রুপা হয়ে যায়। কিন্তুু সে তো  চিনে না কোনটা সোনা  আর কোনটা রুপা। তা চেনার বুদ্ধি তার নেই।

তার পাশে দিয়ে এক সদাগর যাচ্ছেন। সদাগর খেয়াল করে দেখেন ছেলেটি মাটি দিয়ে ডিল মারলে তা সোনা ও রুপা হয়ে যায়। কে এই ছেলে সদাগর  এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কোনো লোক নেই তাড়াতাড়ি করে সোনা রুপা গুলো একটা গামছাতে বেদে নিলেন। এবং ছেলের সাথে কথা বলে বুঝতে পারছেন সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি তিনি তাকে  জিজ্ঞেস করলেন বাড়িতে তোমার কে আছে সে এই বাড়িতে আমার মা আছে।

সদাগর তাকে নিয়ে তার মায়ের কাছে গিয়ে বললেন শুনেন আমি যদি আপনার এবং আপনারা ছেলের দায়িত্ব নিতে চাই তাহলে আপনি কি রাজি হবেন।  মহিলা বললো আমি গরীব মানুষ। আপনি কি সত্যি আমাদের দায়িত্ব নিবেন। সদাগর বললেন শুধু দায়িত্ব না আমার সম্পত্তির অর্ধেক আপনার ছেলের নামে লিখে দেবো।

মহিলা রাজি হয়ে ছেলেকে নিয়ে সদাগরের সঙ্গে তার  বাড়িতে চলে গেলো। এদিকে সদাগর মহিলা ও তার ছেলেকে  একটি ঘরে থাকার জন্য জায়গায় করে দিলেন। আর তাদের বললেন। তোমাদের যা দরকার তা শুধু আমাকে বলবে। আমি তোমাদের সব দিবো। মহিলা ও তার ছেলে অনেক খুশি।

সদাগর ছেলেটাকে লেখা পড়া শেখানোর জন্য দুজন শিক্ষক নিয়োগ করলেন। এবং তাদের বললেন যে কোনো ভাবে এই ছেলেটাকে সুশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
এদিকে সদাগর তার ঘরের মধ্যে একটি রুমে দিনের বেলা কামলা দিয়ে মাটি রাখেন। রাতে ছেলেকে বললেন বাবা এই মাটি গুলো দিয়ে তুমি এই জায়গায় ডিল মারো। ছেলে  ডিল মারে আর তা সোনা ও রুপা হয়। সদাগর তা বিক্রি করে বিরাট সম্পদের মালিক হয়ে যায়।

এদিকে ছেলে ও বড় হয়ে গেছে তার বয়স ২৫ বছর। সদাগর মনে মনে ভাবতে লাগলো ছেলেটাকে এখন  বিয়ে করানো দরকার। সদাগর লোক পাঠালেন রাজার বাড়িতে। রাজা ছিলেন সদাগরের ছোটবেলার বন্ধু সদাগর লোক পাঠানোর সময় তাকে বলে দিলেন রাজার সামনে গিয়ে প্রথমে আমার সালাম দিয়ে বলবে। 

আমি তোমাকে পাঠিয়েছি আমার ছেলে সাথে রাজা মহারাজের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে। রাজা মহারাজ যে ভাবে চাইবেন ঠিক সেই ভাবে বিয়ে হবে। এ প্রস্তাব শুনে রাজা অনেক রাগান্বিত হলেন। তখন রাণী রাজাকে বুঝিয়ে বললেন শুনেন মহারাজ সদাগর আপনারা ছোটবেলার বন্ধু। এভাবে তার দেওয়া প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে সে অনেক কষ্ট পাবে।

আপনি এক কাজ করেন যে কাজ সদাগরের পক্ষে সম্ভব নয়। এ রকম একটি প্রস্তাব আপনি দিয়ে দেন। রাজা বললেন ঠিক আছে। তিনি সদাগরের পাঠানো লোকে বললেন শুনেন আপনি সদাগরকে গিয়ে বললেন সে যদি
তার বাড়ি থেকে আমার বাড়ী পর্যন্ত দুটো রাস্তা একটি সোনার ও একটি রুপার তৈরি করতে পারে তাহলে আমার মেয়ে তার ছেলের কাছে  বিয়ে দিবো। লোকটি গিয়ে সদাগরকে রাজার দেওয়া প্রস্তাবের কথা জানালো।

সদাগর বললেন চলেন আমার সাথে রাজার বাড়িতে গিয়ে
সদাগর রাজাকে বললেন মহারাজ আমি প্রস্তাবে রাজি। তবে আপনি আমার কিছু লোক দিয়ে সাহায্য করতে হবে।
রাজা বললেন ঠিক আছে মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করা হলো। সদাগর কামলা দের বললেন। তোমরা এক কাজ করো। রাস্তার মধ্যে খানে কিছু মাটি গুড়ো করে রেখে দাও

এভাবে পুরো রাস্তায় রাখবে। কামলারা তাই করলো। সন্দা সময় সদাগর রাজাকে গিয়ে বললেন। মহারাজ আপনি এক কাজ করেন। আজ রাত আটটার পর থেকে আপনারা রাজ্যের সকল লোকজনকে চলাচল করেত নিষেধ করে দেন। তারা যেন রাত আটটার পর থেকে আর ঘর থেকে বাইর না হয়। রাজা তাই করলেন।

সদাগর রাত নয়টার পর তার ছেলেকে নিয়ে আসলো রাস্তায়। আর ছেলেকে বললো বাবা তুমি এই মাটি গুলো ছিটিয়ে দিয়ে যাও। রাস্তার উপরে এই রাস্তায় ছিটাবে ডান হাতে আর ঐ রাস্তায় ছিটাবেড়া বাম হাতে। এক রাতের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ। সদাগর তৈরি করে ফেললেন সোনা ও রুপার রাস্তা।

এখন ঠিক করা হলো বিয়ের দিন তারিখ বর নিয়ে আগের দিন আশা হলো রাজদরবারে। পরের দিন বিয়ে অনুষ্ঠান শুরু এদিকে রাজার মন ভালো না। কিভাবে বিয়ে ভাঙা যায় এই চিন্তা রাজার মাথায় গুরুপাক খাচ্ছে।
এদিকে রাজদরবারে চলছে বিয়ে জাকযমক  অনুষ্ঠান রাজার মা নাতিন জামাইয়ের জন্য একটি খাট সাজিয়ে রেখেছেন রাতে নাতিন জামাই এই খাটে ঘুমাবে। তিনি মশকরা করে খাটের উপরে একটি বিছানা ও খাটের নিচে আরো একটি বিছানা করে দিলেন।

রাতে যখন বরকে ঘুমানোর জন্য রুমে দেওয়া হলো সে খাটের উপরে না শুয়ে খাটের নিচে শুয়ে পড়লো। পর দিন সকালে দেখা যায় বর নিচে শুয়ে আছে। রাজা মনে মনে ভাবলেন এইতো সুযোগ। রাজা রাজদরবারে সবাইকে ঢেকে ঘোষণা দিলেন। সে আমাদেরকে অপমান করেছে।

এর জন্য তার ফাঁশির আদেশ দেওয়া হলো ।  জল্লাদ টেনে নিয়ে যাচ্ছে বরকে ফাঁশি মঞ্চের দিকে। আগামী কালকে তার ফাঁশি।  সে যখন রাতে ঘুমিয়ে আছে তখন তা বুদ্ধি এসে ভাগ্যকে বললো কিরে ভাগ্য এখন তার জীবন বাঁচা

ভাগ্য বললো ভাই আমি তোমার কাছে আন্তরিক দুঃখীত
দয়া করে তুমি তার জীবন বাঁচাও।  আমি শিকার করলাম তুমি বড়। তখন বুদ্ধি তার মাথায় ঢুকে পড়লো।  এবং তার ঘুম ভাংলো সে জল্লাদকে ডেকে বললো এই জল্লাদ আমাকে কি জন্য এই জায়গায় আটকে রাখলে।

জল্লাদ বললো মহারাজের হুকুমে আটকে রাখেছি। আর মহারাজের হুকুমে কালের আপনার ফাঁশি হবে। সে বললো কোথায় তর মহারাজ উনাকে ডাক। জল্লাদ গিয়ে রাজাকে বললেন মহারাজ এই ঘটনা। রাজা রাজদরবারে সবাইকে ডেকে আনলেন। আর জল্লাদকে বললেন ওরে নিয়ে আয়।
জল্লাদ তাকে নিয়ে আসলো। রাজা বললেন তুমি আগে অনেক বেয়াদবী করেছো । এখন আবার কি বলতে চাও  সে বললো আমাকে অপমানিত করার কারণে আমি আপনারা ফাঁশির আদেশ দিলাম।

রাজা বললেন আমি কিভাবে তোমাকে অপমান করলাম। সে বললো আপনি আমাকে কাঠের খাটে ঘুমানোর জন্য দিয়েছেন এটা আপনারা অপরাধ। আপনি কি জানেন না আমি সোনা রুপার রাস্তা বানিয়ে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছি। সেই আমি কিভাবে আপনার কাঠের খাটে ঘুমাই। এর জন্য আমি কাউকে কিছু না বলে নিচে ঘুমিয়ে পড়েছি। এ জন্য আপনি আমাকে ফাঁশি আদেশ দিয়েছেন। এখন আপনি বলেন অপরাধ আমার নাকি আপনারা। রাজা বললেন আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়েছে। তুমি তাড়াতাড়ি সাজগোজ করে নাও। বিয়ে অনুষ্ঠান এখন শুরু হবে।

বুদ্ধি ভাগ্য কে বললো কিরে তুই কোথায় তাকে বাচিয়ে দিলাম। ভাগ্য বললো ভাই আমার দুজন মিলে মিশে একজন মানুষ মধ্যে যদি  না থাকি তাহলে সে জীবনে কোনো সময় সফল হতে পারবে না










Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url